শুভ্র মেহেদী, জামালপুর:
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নে বন্যার পানির প্রবল তোড়ে মাঝখান থেকে গার্ডার ও পিলার ভেঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঝিনাই নদীর উপর নির্মিত একটি ব্রিজের দুই প্রান্ত। তারপর প্রায় দু বছর কেটে গেলেও জোড়া লাগেনি ব্রিজের ভাঙ্গা অংশ। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই ব্রিজের উপর নির্ভরশীল দুই উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের ব্রিজই চলাচলের একমাত্র ভরসা স্থানীয় মানুষদের কাছে।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের চররৌহা, চরনান্দিনা, বড়বাড়িয়া, বীরবড়বাড়িয়া, হেলেঞ্চাবাড়ী, স্বাধীনাবাড়ী, চরহাটবাড়ী, সিধুলী, চুনিয়াপটল, সিংগুরিয়া, ডিগ্রীপাজবাড়ী, খন্দকারবাড়ী, চরছাতারিয়া, আদ্রা, শুয়াকৈর এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার চরলোটাবর, শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ী, সদরাবাড়ী, রায়েরছড়া গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সরিষাবাড়ী উপজেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল মাঝপথ দিয়ে বয়ে চলা ঝিনাই নদী। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত, হাটবাজার পরিচালনা, উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিসহ নানা ক্ষেত্রে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আসছিল স্থানীয়রা।
দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে শুয়াকৈর-হুদুরমোড় শাহাজাদাহাট এলাকায় ঝিনাই নদীর উপর ২শ’ মিটার ঝারকাটা ব্রিজ নির্মানের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০০৬ সালে ব্রিজটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয় এ অঞ্চলের মানুষের। কিন্তু ২০২০ সালের ২১ জুলাই বন্যার পানির প্রবল তোড়ে ব্রিজটির দুটি পিলারসহ ২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি গার্ডার এক ফুট দেবে যায় এবং ওইদিন রাতেই ব্রিজের মাঝের অংশে ৭ নাম্বার পিলার এবং ৬ ও ৭ নাম্বার স্প্যানের ৪০ মিটার ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও জোড়া লাগেনি ব্রিজের দুইপ্রান্ত। ফলে পূর্বের দুর্ভোগ আবারো ফিরে আসে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর উপর স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো তৈরী করে কোন রকমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে এপথে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। এতে করে মাঝে মধ্যেই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বর্ষা কিংবা বন্যার সময় নৌকা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে না চাওয়ায় ক্রমেই কমে আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এছাড়াও সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে পণ্য আনা-নেয়ায় বাড়তি খরচের পাশাপাশি চরের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। রোগী পরিবহনে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।
স্থানীয়দের অভিযোগ ব্রিজটি নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল এবং অসাধু ব্যক্তিরা নদী থেকে বালি উত্তোলনের ফলেই ব্রিজটি ভেঙ্গে যায়। এরপর জনপ্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ব্রিজ নির্মানে কেউ কোন উদ্যোগ নেয়নি।
জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সায়েদুজ্জামান সাদেক জানান, বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজটির তথ্য ইতিমধ্যে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুতই ব্রিজটি নির্মান করে যাতায়াতের পথ সুগম করবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।