Home ফিচার গ্রহাণুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে নাসার ‘ডার্ট’

গ্রহাণুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে নাসার ‘ডার্ট’

by বাংলা টুডে ডেস্ক
২৫৩ views

আইটি ডেস্ক:

শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে পৃথিবী থেকে ৬৮ লাখ মাইল দূরের এক গ্রহাণু পি-কে সফলভাবে আঘাত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি ‘ডার্ট মহাকাশযান’। পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণু হুমকি তৈরি করলে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য কীভাবে ধাক্কা মেরে এর গতিপথ বদলে দেওয়া যায়, এটি ছিল সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথম পরীক্ষা।

রয়টার্স জানিয়েছে, এ পরীক্ষা চালানো হয় মোটামুটি ১৬০ মিটার চওড়া একটি গ্রহাণুর ওপর, যার নাম দেওয়া হয়েছে ডাইমরফোস। দশ মাস আগে পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়া নাসার ‘ডার্ট মহাকাশযান’ সোমবার সফলভাবে ওই গ্রহাণুর গায়ে আছড়ে পড়ে এবং ধ্বংস হয়ে যায়। মোটামুটি একটি ফুটবল স্টেডিয়াম আকারের ওই গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ডার্টের গায়ে বসানো ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে একটি করে ছবি পাঠাতে থাকে পৃথিবীতে।

পুরা দৃশ্য ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে নাসার মিশন অপারেশন সেন্টার থেকে ওয়েবকাস্ট করা হয়। আকারে ভেন্ডিং মিশনের চেয়েও ছোটো ওই মহাকাশযানের ধাক্কায় গ্রহাণু ডাইমরফোসের গতিপথ আদৌ পাল্টানো গেল কি না, কিংবা কতটা পাল্টালো বিজ্ঞানীরা এখন সেটা দেখবেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মাইল বেগে ডার্টের ওই আঘাতে ডাইমরফোসেরগতি খুব সামান্য হলেও কমবে, সেটা হতে পারে প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাণ।

তাতেও এর কক্ষপথে সুক্ষ্ম পরিবর্তন আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে এর গতিপথ পাল্টে দেবে। পৃথিবীর জন্য বিপদজনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়ার এই কৌশলের নাম দেওয়া হয়েছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইমরফোসের ক্ষেত্রে গতিপথের পরিবর্তন কতটা হল, তা মাপতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।

তবে ডার্ট মহাকাশযান পাঠিয়ে গ্রহাণুকে আঘাত করার অংশটুকু তারা সফলভাবেই শেষ করেছেন। নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাম মেলোরি বলেন, “নাসা কাজ করে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য।ৃ কে বলতে পারে, হয়ত এ প্রযুক্তিই একদিন আমাদের এই গ্রহকে রক্ষা করতে পারবে।” মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো ছোট বড় গ্রহাণু পি-ের কোনোটি যদি সরাসরি এসে পৃথিবীতে আঘাত হানে, সেটা কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, সেই কৌশল নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন বহুদিন ধরেই।

ডাইমরফোসের মত আকারের কোনো গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে সেটার প্রভাব হবে একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের চেয়েও বহুগুণ বেশি। আর যদি সেই গ্রহাণু এক কিলোমিটার চওড়া হয়, পুরা পৃথিবীতে তার প্রভাব পড়বে। অবশ্য ডাইমরফোসের গতিপথ পৃথিবীর দিকে ছিল না, কোনো হুমকিও এটা তৈরি করেনি। পরীক্ষার সুবিধার জন্য বিজ্ঞানীরা এ গ্রহাণুকে আঘাত করার জন্য বেছে নিয়েছেন।

সাড়ে ৩২ কোটি ডলারের এই মিশনে ২০২১ সালের নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে ডার্ট মহাকাশযানটি নিয়ে মহাকাশের দিকে রওনা হয় স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-নাইন রকেট। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডার্ট, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে সূর্যের চারদিকে নিজ কক্ষপথে ঘুরতে শুরু করে। সেই যাত্রাপথেই সোমবার সংঘর্ষ হয় ডাইমরফোসের সঙ্গে। আর পুরো পরীক্ষাটি ছিল একটি রোবোটিক সুইসাইড মিশনের মত।

গ্রহাণুর সঙ্গে ডার্টের দূরত্ব যত কমছিল, এর গায়ে বসানো ক্যামেরা ড্রাকোর পাঠানো ছবিতে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছিল ডাইমরফোসের আকার। তাতে উত্তেজনা বাড়ছিল নাসার মিশন অপারেশন সেন্টারে। চূড়ান্ত মুহূর্তে পুরো টিভি স্ক্রিন দখল করে নেয় ডাইমরফোসের পৃষ্ঠদেশের ছবি এবং তারপর ছবি পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, সফলভাবে গ্রহাণুকে ধাক্কা দিয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পাঠানো ডার্ট।

আরো পড়ুন

সম্পাদক: শুভ্র মেহেদী

মোবাইল: ০১৯৮৫৮২৭৮৩০
ই-মেইল: jamalpur.banglatoday.2022@gmail.com

মিডিয়া ক্যাম্পাস, পৌরসুপার মার্কেট (২য় তলা), রানীগঞ্জ বাজার, তমালতলা, জামালপুর।

Developed by Media Text Communications