শুভ্র মেহেদী, জামালপুর
আড়াই বছর ফেইসবুকে প্রেম। তারপর ভালোবাসার টানে সুদুর মেক্সিকো থেকে ছুটে এসেছেন এক তরুণী। খ্রিষ্ট ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহন করে বাংলাদেশী প্রেমিককে বিয়েও করেছেন মেক্সিকান ওই তরুণী। বর্তমানে তারা অবস্থান করছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে। বিদেশি বউ পেয়ে খুশি যেমন যুবকের পরিবার, তেমনি এক নজর দেখতে ভীড় করছেন প্রতিবেশী ও আশেপাশের এলাকার মানুষ।
ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশের এক তরুণের কাছে ছুটে এসেছেন মেক্সিকান তরুণী গ্ল্যাডিস নায়েলি টরিবিও মরালেস। ভালোভাবে ইংরেজীতে কথপোকথনের জন্য ফেইসুবকে বন্ধু খুজতে থাকেন বাংলাদেশী তরুণ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চর পোগলদিঘার আলহাজ নজরুল ইসলামের ছেলে রবিউল হাসান রুমান। তারপর ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রুমানের সাথে পরিচয় হয় গ্ল্যাডিস নায়েলি টরিবিও মরালেসের। নায়েলিও ইংরেজীতে পারদর্শী না হলেও আলাপচারিতা চালিয়ে যান রুমানের সাথে। এভাবেই কথা বলতে বলতে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তাদের। এর এক পর্যায়ে ভালো লাগা ও ভালোবাসায় পরিণত হয় তাদের আড়াই বছরের সম্পর্ক। তারপর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন দুজনই।
অবশেষে গত ২১ নভেম্বর রাত সোয়া ৮টায় সুদুর মেক্সিকো থেকে বিমানে করে বাংলাদেশে আসেন মেক্সিকান তরুণী নায়েলি। রুমান ও তার পরিবারের সদস্যরা হযরত শাহজালাল (র:) বিমান বন্দর থেকে নায়েলিকে নিয়ে যান ঢাকা জজকোর্টে। সেখানে গিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় এফিডেভিটের মাধ্যমে নিজের খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামী রীতি অনুযায়ী রুমানকে বিয়ে করেন নায়েলি, নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নায়েলি আক্তার। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেদিন রাতেই নায়েলিকে গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ীর চর পোঘলদিঘায় নিয়ে আসেন রুমান। মেক্সিকোর পোএবলা শহরের ব্যবসায়ী গ্রেগ্রোরিও টরিবিওর মেয়ে নায়েলি(৩২)। মেক্সিকোর বেনেমেরিটা অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব পোএবলা থেকে তিনি ২০১৬ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। আর রুমান(২৯) ময়মনসিংহের রুমডো ইন্সটিটিউট অব মডার্ন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যালে ডিপ্লোমা শেষে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। দুজনের ইচ্ছে পুরণ হওয়ায় বেশ খুশি রুমান ও নায়েলি, দোয়া চেয়েছেন সবার কাছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রথমে বিদেশী কারো সাথে প্রেমের বিষয়টি মেনে নিতে না চাইলেও তাদের গভীর প্রেমের বিষয়টি বুঝতে পেরে মেনে নেয় পরিবার। প্রতিবেশী ও স্বজনরা বিদেশীনিকে এক নজর দেখতে ভীড় করছেন রুমানের বাড়ীতে, আর তারাও বেশ উচ্ছসিত।
এ ব্যাপারে পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: সামস উদ্দিন জানান, মেক্সিকো থেকে প্রেমের টানে এক তরুণী বাংলাদেশে এসেছে। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক আইনগতভাবে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। পরিবার তাদের মেনে নিয়েছে, আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।
ভিন্ন ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ হলেও এই যুগলের দাম্পত্য জীবন সুন্দর কাটবে এমনই প্রত্যাশা সকলের।