শাহজাহান সিরাজ
মাথার চুল কাটব ভেবে একটা একশো টাকার নোট হাতে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বেরোতেই গ্রামের কাশেম চাচা সামনে দাঁড়ালো। কাঁপা কন্ঠে “ বাবা কালকে গাইবেন্দাত গেচুনু। কেবল পনেরটা ট্যাকা কামাই করচোম, তাতেই পুলিশে মোর রিকসে থামেয়া পেচেনদার দুইজোনাক নামেয়ায় ডাং। মোকও একটা ডাং মারিয়ে রিকসের পাম ছাড়ি দিয়্যা সোজায় বাড়িত পাটে দিলো। সরমোতে সেই ডাংগের কতা তোর চাচিক কম নাই। কিন্তুক একোন যে বেলা দশটা পার হলো, এলাও হামরা কেউ কিচুই খাইনেইরে বাপ। মোক একশোটা ট্যাকা হাওলাত দে- চাউল কিনিম।”
কাশেম চাচার ছল ছল চোখ, শুকনা মুখ আর ঠোট দুটো দেখে আমি সাথে সাথেই একশো টাকার নোটটা তার হাতে দিলাম। “এগলে দিন কাটি যাক, মুই তোর ট্যাকাটা ফেরত দিয়া যাইম বাপ।”-এই বলে কাশেম চাচা চলে গেল। আমি মাথার লম্বা চুলগুলোতে হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে হালকাভাবে টানছি আর ভাবছি-এখন কি করবো? পৃথিবীর এই করোনা পরিস্থিতিতো আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। যদি দীর্ঘ সময় এই অবস্থা থাকে, তাহলে এই বাংলাদেশের কি হবে? এই কাশেম চাচার কি হবে?
ভেবে চিন্তে ঠিক করলাম যে, যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি,ততদিন সেলুনে যাব না। হাত খরচাও করব না। কাশেম চাচা হয়তবা লজ্জায় আমার কাছে আর আর আসবে না। তাই আমি নিজেই আগামী শুক্রবার তার বাড়িতে গিয়ে আরো একশো টাকা দিয়ে আসবো। অবশেষে তিনটাকা দিয়ে একটা ব্লেড কিনে বাড়িতেই মাথাটা নেড়ে করে নিলাম।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী